Wednesday, July 27, 2016

চলছে রুট–বন্দনা

লর্ডসে তাঁর ব্যাট হাসেনি। প্রথম ইনিংসে ৪৮ রানের একটা ইনিংস আছে বটে, কিন্তু সেখানে তাঁকে ঠিক জো রুট মনে হয়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই টেস্টটাও হেরেছিল ইংল্যান্ড। সেই দায়টা অবশ্য একা রুটের নয়। তবে ব্যাট হাতে দলের সবচেয়ে বড় আস্থা যেহেতু তিনিই, ওল্ড ট্রাফোর্ডে পরের টেস্টটায় তাঁর দায়িত্ব আরেকটু বেড়ে গিয়েছিল। সেই দায়িত্ব কী দারুণভাবেই না পালন করলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ার-সেরা ২৫৪ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ৪৮ বলে ৭১! শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ৩৩০ রানের জয়ে সবচেয়ে বড় নায়ক যে রুটই, তাতে তাই মনে হয় না সন্দেহ আছে কারও। ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক আর পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক, দুজনের মুখেই তাই রুটের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। দুজনই মেনে নিয়েছেন, এই টেস্টে দুই দলের ব্যবধান ছিলেন একজন—জো রুট!
কুকের উচ্ছ্বাসটা যে বেশি হবে, সেটিই স্বাভাবিক। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনেই বলেছেন, ‘জো বিশ্বমানের খেলোয়াড়। এটা দুর্দান্ত ইনিংস। আমার দেখা অন্যতম সেরা। ওই ইনিংসটাই ম্যাচটা আমাদের হাতে এনে দিয়েছে।’
প্রথম ইনিংসে কুক নিজেও সেঞ্চুরি করেছেন, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৮ বলে ৭৬। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে যে কিছুটা স্বভাববিরুদ্ধ খেলে ঝোড়ো গতিতে রান করেছেন, সেই কৃতিত্বটাও রুটকেই দিলেন কুক। রসিকতা করে বলেছেন, ‘ও একটা কাজ খুব ভালো পারে—স্কোরবোর্ডটা সচল রাখে। ফলে আমার মতো ঠেকিয়ে খেলা ব্যাটসম্যানকেও ওর সঙ্গে তাল মেলাতে হয়।’
শুধু দ্রুত রান তোলাই নয়, দলের প্রয়োজনে রুট যে বেশ ঠেকিয়েও খেলতে পারেন, সেটি অবশ্য অনেক আগে প্রমাণ করেছেন। ২০১২ সালে ভারত সফরে টেস্টে অভিষেক ইনিংসেই ৭৩ রান করেছিলেন ২২৯ বল খেলে। সেদিন থেকেই নতুন সম্ভাবনা হিসেবে আবির্ভূত। ৪৪ টেস্টে ৫৬.১৫ গড়ে ৩৮৭৫ রানই বলে দিচ্ছে সেই সম্ভাবনাকে কেমন পূর্ণতা দিয়েছেন। টেস্টে ১০টি সেঞ্চুরি করেছেন, যার দুটি ডাবল—একটিতেও ইংল্যান্ড হারেনি। ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে রুটের রান ৩২৫। গত ৫০ বছরে ইংল্যান্ডের হয়ে এক টেস্টে তাঁর চেয়ে বেশি রান করেছেন শুধু গ্রাহাম গুচ (১৯৯০ সালে লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে ৪৫৬)।
বয়স ২৬ চলছে, এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের হয়ে ছয়বার টেস্টে ম্যাচসেরা হয়েছেন রুট। ইংলিশ ক্রিকেটারদের মধ্যে এই বয়সে টেস্টে তাঁর চেয়ে বেশি ম্যাচসেরা হয়েছেন শুধু ইয়ান বোথাম (৯ বার)। সব মিলিয়ে এখন রুটে মুগ্ধ তাঁর প্রতিপক্ষরাও। ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের পর তাই পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহও বলেছেন, ‘যেভাবে রুট এই টেস্টে ব্যাটিং করেছে, সেটি অসাধারণ। দুর্দান্ত ইনিংস। লর্ডস আর এই টেস্টের মধ্যে ব্যবধান ছিল রুট ও কুকের ব্যাটিং।’
তবে এই ইনিংসের পর রুট সবচেয়ে বড় প্রশংসাটা পেয়েছেন সাবেক পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ইউসুফের কাছ থেকে। তাঁর মতে, ‘এটা একটা বাঁধিয়ে রাখার মতো ইনিংস।’ শুধু তা-ই নয়, এই সময়ের অন্য দুই সেরা ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স ও বিরাট কোহলির চেয়েও রুটকে এগিয়ে রেখেছেন ইউসুফ, ‘মাত্র কয়েক বছর ধরে ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। এরই মধ্যে তিন সংস্করণে ওর গড় বলে দিচ্ছে সে কেমন ব্যাটসম্যান। আমার মতে, সে-ই এখন এক নম্বর।’ তথ্যসূত্র: এএফপি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

No comments:

Post a Comment