১৭ জানুয়ারি ১৯৫৮। ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভাল মাঠ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম পাকিস্তান প্রথম টেস্ট ম্যাচ। ১৯৫২তে পাকিস্তান প্রথম টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। ছয়দিনের টেস্ট। মাঠ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্তত এ মাঠে টসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ব্যাট করে একটি অবস্থান তৈরি করে নিতে পারলে জয় প্রায় নিশ্চিত।
টস হয়ে গেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বশেষ সাদা ক্যাপ্টেন গ্যারি আলেকজান্ডার টস জিতলেন এবং ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন। নেয়ারই কথা। তাদের দলে আছেন হান্ট, সোচার্স, কানহাই, স্মিথ, উইকিস ও ওয়ালকটের মতো ব্যাটসম্যান। তাদের দলে আরো আছেন দুই অ্যাটকিনসন ভাই (ডেনিস ও এরিক অ্যাটকিনসন), আল্ফ ভ্যালেন্টাইন ও বিধ্বংসী বোলার গিলক্রিস্ট।
ফিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে পড়ল পাকিস্তান দল। ক্যাপ্টেন আব্দুল হাফিজ কারদার, উইকেটকিপার ইমতিয়াজ আহমেদ, হানিফ মোহাম্মদ, আলিমউদ্দিন, সাইয়িদ আহমেদ, ওয়াজির মোহাম্মদ ম্যাথিয়াস, ফজল মাহমুদ, নাসিম-উল-গনি, মাহমুদ হোসাইন ও হাসিব আহসান।
প্রথম দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২ উইকেট ২৬৬। দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে ৯ উইকেটে ৫৭৯তে পৌঁছে আলেকজান্ডার ইনিংস ঘোষণা করলেন। উইকিস ১৯৭, মাহমুদ হোসাইনের বলে ইমতিয়াজের হাতে কট বিহাইন্ড, ডাবল সেঞ্চুরি মিস হয়ে গেল। হান্ট করলেন ১৪২, সোবার্স ৫২ ও স্মিথ ৭৮। খেলা হলো ১৭২.২ ওভার; ওভারপ্রতি গড় রান ৩.৩৬।
স্মিথ ও গিলক্রিস্টের বলের সামনে পাকিস্তান দাঁড়াতেই পারল না। ৪২.২ ওভারে ১০৬ রানে গুটিয়ে গেল পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস। পাকিস্তানে ওভারপ্রতি গড় রান ২.৫। সর্বোচ্চ ২০ রান করেছেন ইমতিয়াজ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭, দুজন হানিফ ও ম্যাথিয়াস।
নির্ঘাত ফলো অন। পাকিস্তানের ইনিংস পরাজয় আর ঠেকানো গেল না। আবারো ব্যাট করতে নামল পাকিস্তান। দ্বিতীয় দিনের শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে পাকিস্তানের রান ৬। পরের দিনটি হানিফ কোনোভাবে গা বাঁচিয়ে বল ঠেকিয়ে কাটিয়ে দিলেন। দিনশেষে পাকিস্তান ১ উইকেটে ১৬২, হানিফ ৬১; সেঞ্চুরির কাছাকাছি এসে ৯১ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফিরলেন ইমতিয়াজ। চতুর্থ দিনের শেষে যেন আশার আলো দেখা গেল। হানিফ ১৬১, দলের রান ২ উইকেটে ৩৩৯। দিনশেষে হানিফ ব্রিজটাউনের কোনো না কোনো মুসলমান পরিবারের আতিথ্য গ্রহণ করেন। খেয়েদেয়ে যখন রুমে ফিরে আসেন একটা না একটা চিরকুট পান— দলনায়ক কারদারের হাতে লেখা: ‘তুমিই আমাদের বাঁচাতে পারবে’ বা ‘ওরা তোমাকে আউট করতে পারবে না’ কিংবা ‘তুমিই আমাদের শেষ ভরসা’।
পঞ্চম দিনের শেষে পাকিস্তানের রান ৩ উইকেটে ৫২৫, হানিফ মোহাম্মদের ২৭০। পরদিন কারদার যখন খুশিমনে ইনিংস ঘোষণা করলেন, তখন পাকিস্তান ৮ উইকেটে ৬৫৭ আর হানিফ
মোহাম্মদ শেষ দিকে খানিকটা অধৈর্য হয়ে পড়ায় ডেনিস অ্যাটকিনসনের একটি বল যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যাপ্টেন ও উইকেটকিপার আলেকজান্ডারের হাতে তুলে দেন, তখন তাঁর রান দাঁড়িয়েছে ৩৩৭। ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডের লেন হাটনের ট্রিপল সেঞ্চুরি দেখার পর পুরো ২০ বছর ক্রিকেটবিশ্বকে আরেকটি ট্রিপল সেঞ্চুরি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে, এটিই হানিফ মোহাম্মদের।
পাকিস্তান ভালোভাবেই ফলো অন এড়িয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে মাঠে নামে। কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৮। ১৯৫৮-এর ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাকিস্তান প্রথম টেস্ট ড্র হয়ে গেল। হানিফ মোহাম্মদ প্রশংসিত হলেন তাঁর মহাকাব্যিক ব্যাট চালনাশৈলীর জন্য।
খেলাকে যারা রাজনীতির আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেননি, তাদের অনেকের জন্য হানিফ মোহাম্মদের মৃত্যু একটি গৌরবময় অধ্যায়ের অবসানের মতোই। কারদার-হানিফ-ফজল মোহাম্মদের হাত ধরেই পাকিস্তানের ক্রিকেট দাঁড়িয়েছে। কেউ পিতৃত্বের দাবি না করলেও, পাকিস্তানের ক্রিকেট পিতা হিসেবে তারাই সমাদৃত।
হানিফ মোহাম্মদের বিবেচনায় পৃথিবীর দুজন গ্রেট ব্যাটসম্যান হচ্ছেন ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান ও শচীন টেন্ডুলকার। কিন্তু নিজের সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন: আই ওয়াজ নেভার আ গ্রেট প্লেয়ার। আমি ছিলাম গড়পড়তা মানের একজন খেলোয়াড়— বিশেষ করে ওপেনিং ব্যাটসম্যান। আমার সাফেল্যের কারণ আমার অভিনিবেশ।
হানিফ মোহাম্মদের জন্ম ২১ ডিসেম্বর ১৯৩৪ ব্রিটিশ ভারতের জুনাগড়ে অবস্থাপন্ন পরিবারে। তাঁর মা আমির বাই সেকালের একজন সেরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ছিলেন। তাদের চার ভাই পাকিস্তান দ্বিতীয় ক্রিকেট দলে খেলেছেন: ওয়াজির মোহাম্মদ, সাদিক মোহাম্মদ, মুশতাক মোহাম্মদ ও হানিফ তো বটেই। আরেক ভাই রইস মোহাম্মদ পাকিস্তান জাতীয় দলের দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। হানিফের ছেলে শোয়েব মোহাম্মদও জাতীয় দলে খেলেছেন। একটি পরিবার থেকে এত অধিকসংখ্যক ক্রিকেটার উঠে আসার নজির সামান্যই।
হানিফ মোহাম্মদের নিজের কথা:
পাকিস্তানের জন্য খেলতে পারা আমার জন্য অনেক গৌরবের ব্যাপার। ১৯৫২ সালে নবগঠিত পাকিস্তান দলের জন্য যখন নির্বাচিত হই, আমি কেবল স্কুলছাত্র। করাচির ম্যাটিং উইকেটে আমরা এমসিসির সঙ্গে কেবল একটা বেসরকারি টেস্ট খেলেছি। এর মধ্যেই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যাই। এমসিসির বিরুদ্ধে আমিই সবচেয়ে বেশি রান করেছিলাম।
সবুজ ক্যাপ মাথায় দিয়ে পাকিস্তানের জন্য খেলতে পেরেছি, এটাই সম্মানের ব্যাপার। তখন আমাদের দৈনিক ১৫ রুপি করে দেয়া হতো। এখন খেলোয়াড়রা অনেক টাকা পায়, বিজ্ঞাপন থেকেও প্রচুর অর্থ আসে। দেশের জন্য যে খেলতে পারছি, এর বেশি কিছু আমাদের চিন্তায় ছিল না। সে আমলেও কোনো কোনো ব্যাটসম্যান দীর্ঘক্ষণ ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারত। আমার টেকনিক ও অভিনিবেশ আমাকে সেদিকেই টেনে নেয়। যাদের বিরুদ্ধে খেলছি, তারা মনে করত আমাকে হটিয়ে দিতে না পারলে খেলা আমাদের দিকেই ঝুঁকে পড়বে। আমাদের সে দিনগুলোয় আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার কোনো উপকরণ ছিল না। হেলমেট, টেস্ট গার্ড কিংবা থাই প্যাড কিছুই নয়। গিলক্রিস্টের বাউন্সার ছিল ভয়াবহ। অভিনিবেশ করতে পেরেছি বলেই সাড়ে তিনদিন ক্রিজে টিকে থাকতে পেরেছি। ৯৭০ মিনিট! এ রেকর্ড এখনো কেউ ছুঁতে পারেনি।
এখন টেস্ট ক্রিকেটের যে ধারা, তাতে এ ক্রিজে সাড়ে তিনদিন থাকার রেকর্ড অধরাই রয়ে যাবে।
১৯৫২-এর অক্টোবরে নয়াদিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের উদ্বোধনী টেস্ট খেলতে যান। টেস্টের প্রথম দিন তাঁর বয়স ১৭ বছর ৩০০ দিন। তখনকার জন্য পৃথিবীর কনিষ্ঠতম টেস্ট অভিষেক তাঁরই। এত দিন এ রেকর্ড ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেফ্রি স্টলমেয়ারের। তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর ১০৫ দিন।
সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া হানিফ মোহাম্মদের দল তাঁদের দ্বিতীয় টেস্টে লক্ষৌয়ের ইউনিভার্সিটি গ্রাউন্ডে ভারতকে এক ইনিংস ও ৪৩ রানে হারিয়ে দিয়েছে। প্রথম পাকিন্তানি সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে আবির্ভূত হলেন নজর মোহাম্মদ, হানিফ করলেন ৩৪। ফিরতি সফরে ১৯৫৫-এর জানুয়ারিতে বাহওয়ালপুর স্টেডিয়ামে হানিফ করলেন দেশের মাটিতে পাকিস্তানি হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরি। ১৭টি চার আর একটি ছক্কাসহ ১৪২ রান।
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ম্যাচে ১৯২৯-৩০-এ ডন ব্র্যাডম্যানের ৪৫২ রান দীর্ঘ ২৮ বছর অনতিক্রম্য রয়ে যায়। ১৯৫৮-৫৯-এ কায়েদে আজম ট্রফিতে তিনি ব্র্যাডম্যানকে ছাড়িয়ে গেলেন। করাচির হয়ে খেলতে নেমে তিনি বাহওয়ালপুরের বিরুদ্ধে ৪৯৯ রান করে পঞ্চম সেঞ্চুরি ছোঁয়ার মুহূর্তে তিনি রান আউট হয়ে গেলেন। টানা ৩৬ বছর হানিফ মোহাম্মদও অনতিক্রম্য থাকার পর ১৯৯৪তে ব্রায়ান লারা ওয়ালউইকশায়ারের পক্ষে ডারহামের বিরুদ্ধে ৫০১ রান (নট আউট) করে রেকর্ডটি ভাঙেন।
হানিফের যখন প্রকৃত খেলোয়াড়ি জীবন, তখন আর প্রায় সবার মতো তিনিও বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। ৫৫ ম্যাচে ১২টি সেঞ্চুরিসহ ৩ হাজার ৯১৫ রান করেন। তিনি বলও করতেন এবং দুহাতেই বল করতে পারতেন।
সুনীল গাভাস্কার ও শচীন টেন্ডুলকারকে লিটল মাস্টার বলা হলেও ১৯৫৮ থেকে হানিফ মোহাম্মদের নামের সঙ্গে এটি বেশি বলা হতে থাকে। তিনি প্রথম লিটল মাস্টার। ঢাকার মাঠও হানিফের সাফল্যের সাক্ষ্য দেয়। ১৯৬২তে এখানেই তিনি দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন।
হানিফ মোহাম্মদের নিজের কথা:
কোনটা যে অফিশিয়াল ক্রিকেট আর কোনটা আন-অফিশিয়াল, এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। আমি যে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলতে পারব, এটাও কখানো ভাবিনি।
ভালো খেলোয়াড় কেন আগের মতো পাকিস্তান উপহার দিতে পারছে না— হানিফ মনে করেন, সুযোগ-সুবিধা খুব সীমিত। খেলার মাঠও কম, শিশু ও তরুণদের ক্রিকেট খেলতে হয় রাস্তায়— শুরুটাই ভালোভাবে হয়ে ওঠে না। এর মধ্যে দু-একজন যারা ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে খেলার সুযোগ পান, তারা নিজেদের তৈরি করে নিতে পারেন।
অবশ্য প্রযুক্তি খেলোয়াড়দের অনেক সাহায্যও করছে। ভিডিও দেখে খেলোয়াড়ের ক্রীড়াশৈলী সম্পর্কে একটা ধারণা নেয়া যায়। আমরা এমন বোলারের মুখোমুখি হয়েছি, যার সঙ্গে আগে কখনো দেখাই হয়নি। হেলমেটসহ আরো অন্যান্য উপকরণ খেলোয়াড়ের শরীরকে রক্ষা করে। আমাদের সব কাজের জন্য একটি অস্ত্র ছিল— ব্যাট।
পাকিস্তান ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের চেয়ারম্যান কার হওয়া উচিত?
আজিজ ভাটের মতো সাবেক ক্রিকেটার না তারিক জিয়ার মতো জেনারেল না শাহরিয়ার খানের মতো আমলার?
হানিফ বললেন, আমি এ রাজনীতিতে জড়াতে চাই না। তবে তিনি যিনিই হোন না কেন, তাকে সত্ পরিশ্রমী ও ক্রিকেটের উন্নয়নে আগ্রহী হতে হবে।
তিনি যাদের বল মোকাবেলা করেছেন, সবচেয়ে বিপজ্জনক মনে হয়েছে গিলক্রিস্টকে, ভারতের দেশাইকে মনে হয়েছে খুব জটিল।
৫০ ওভারের খেলায় কি হানিফ মোহাম্মদ সুবিধা করতে পারতেন? হানিফ মনে করেন, ভালো ব্যাটসম্যান হলে তাকে বিভিন্ন ধরনের শট খেলতে হয়। বিভিন্ন ধরনের বল মোকাবেলা করতে হয়। কিন্তু টেস্ট ম্যাচে তাঁর ওপর ক্যাপ্টেনের হুকুম থাকত যত বেশিক্ষণ সম্ভব টিকে থাকো। কাজেই নিজেকে সেভাবে তৈরি করে নেন। আবার ১৯৬৪তে ইংল্যান্ড সফরে তিনি তাঁর দ্রুততম সেঞ্চুরিটি করেন। খেলতে জানলে সবটার সঙ্গেই খাপ খাওয়ানো সম্ভব। জ্যাক ক্যালিস টেস্ট ম্যাচে যেমন ভালো, ওয়ানডে ম্যাচেও একই রকম। টিকে থাকার ব্যাপারেও হানিফ মোহাম্মদ একটি বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী। একটি টেস্ট ম্যাচে ২২৩ বল খেলে তিনি রান করেছেন মাত্র ২০, গড় রান রেট দাঁড়ায় দশমিক শূন্য আট (০.০৮)।
২১ ডিসেম্বর ২০১৪। হানিফ মোহাম্মাদকে ৮০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন ইউনুস খান, মইন খান, সরফরাজ আহমেদ, আনোয়ার আলী, তওফিক ওমর, সাদিক মোহাম্মদ এবং আরো অনেক ক্রিকেটার। হানিফ মোহাম্মদ পাকিস্তান ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের আচরণ নিয়ে আক্ষেপ করেন। ট্রিপল সেঞ্চুরি করার জন্য পিসিবি ইনজামাম ও ইউনুসকে পুরস্কৃত করেছে, কিন্তু হানিফ মোহাম্মদকে করেনি। এটাও নোংরা রাজনীতির একটি বহিঃপ্রকাশ।
আইসিসির হল অব ফেমে তিনজন পাকিস্তানি ক্রিকেটারের নাম রয়েছে: হানিফ মোহাম্মদ, জাভেদ মিয়াঁদাদ ও ইমরান খান।
১১ আগস্ট ২০১৬ ক্রিকেট কিংবদন্তি ‘অরিজিনাল লিটল মাস্টার’ হানিফ মোহাম্মদ প্রয়াত হন।
ট্রিপল সেঞ্চুরি এবং তার চেয়েও বেশি...
আউট হয়ে যাওয়ার কারণেই হোক কিংবা ইনিংস ঘোষণার কারণে, শুরু থেকে এ পর্যন্ত কাঁটায় কাঁটায় ৩০০ রান করে কেউ মাঠ ছাড়েননি। কিন্তু ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্টে উইকেটে ৭৫১ রান হওয়ার পর পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ইনিংস ঘোষণা করে, ব্রায়ান লারার রান তখন পুরোপুরি ৪০০। লারার ৪০০ রানের জন্য একটু দেরিতে ইনিংস ঘোষণায় ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র হয়।
৩৯ বছর ২৭৫ দিন বয়সে জীবনের শেষ টেস্ট ম্যাচে টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন ইংল্যান্ডের অ্যান্ডি স্যান্ডহাম, কিংস্টনের সাবিনা পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩ এপ্রিল ১৯৩০। টেস্ট ইতিহাসে এ পর্যন্ত ২৮টি ট্রিপল সেঞ্চুরি হয়েছে, ১৫টি বিশ শতকে আর ১৩টি একুশ শতকে। টেস্ট ইতিহাসের ষষ্ঠ ট্রিপল সেঞ্চুরিটি করেন পাকিস্তানের হানিফ মোহাম্মদ ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ট্রিপল সেঞ্চুরির দেশভিত্তিক একটি খতিয়ান:
ইংল্যান্ড: অ্যান্ডি স্যান্ডহাম (১৯৩০), ওয়ালি হ্যামন্ড (১৯৩৩), লেন হাটন (১৯৩৮), জন এডরিচ (১৯৬৫) ও গ্রাহাম গুচ (১৯৯০)।
অস্ট্রেলিয়া: ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান (দুবার ১৯৩০ ও ১৯৩৪), বব সিমসন (১৯৬৪), বব কাউপার (১৯৬৬), মার্ক টেলর ৩৩৪ (অপরাজিত ১৯৯৮), ম্যাথু হেইডেন (২০০৩) ও মাইকেল ক্লার্ক (২০১২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: গারফিল্ড সোবার্স (অপারাজিত ১৯৫৮), লরেন্স রো (১৯৭৪), ব্রায়ান লারা (১৯৯৯ ও ২০০৪) ও ক্রিস গেইল (২০০৫ ও ২০১০)।
পাকিস্তান: হানিফ মোহাম্মদ (১৯৫৮), ইনজামাম-উল-হক (২০০২) ও ইউনুস খান (২০০৯)।
ভারত: বিরেন্দর শেবাগ (২০০৪ ও ২০০৮)।
শ্রীলংকা: সনথ জয়াসুরিয়া (১৯৯৭), মাহেলা জয়াবর্ধনে (২০০৬) ও কুমার সাঙ্গাকারা (২০১৪)।
সাউথ আফ্রিকা: হাশিম আমলা (২০১২)।
নিউজিল্যান্ড: ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (২০১৪)।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: হানিফ মোহাম্মদের ট্রিপল সেঞ্চুরিটি দ্বিতীয় ইনিংসের। ২৬টি ট্রিপল সেঞ্চুরিই প্রথম ইনিংসে হয়েছে। হানিফের এ ট্রিপল সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসে আরেকটি ট্রিপল সেঞ্চুরি দেখতে ক্রিকেটবিশ্বকে ৫৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, ২০১৪তে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ট্রিপল সেঞ্চুরিটিও দ্বিতীয় ইনিংসের।
Friday, August 19, 2016
ব্রিজটাউন মাঠে ক্রিকেট মহাকাব্য ১৯৫৮
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment