ক্রিকেট সম্মেলনে জেমস সাদারল্যান্ড২০১০ সালের অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট কনফারেন্স (এসিসি) অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের চেহারাই বদলে দিয়েছিল। চালু হয়েছিল বিগ ব্যাশ, বড় পরিবর্তন এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডেও। এবার অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে নয়, এসিসি থেকে উচ্চারিত হলো বিশ্ব ক্রিকেটের চেহারা বদলে দেওয়ার। না হলে যে বড় সংকট দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর উত্থান ও জনপ্রিয়তায় বড় ধস নামার শঙ্কা দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে।
আর এই সতর্কবার্তা শোনাল চ্যানেল নাইন ও চ্যানেল টেন। ক্রিকেটের বৈশ্বিক উত্থান, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সম্ভাবনার পেছনে বড় অবদান আছে টিভি সম্প্রচারকদের। আর এই সম্প্রচারকদের মধ্যে বড় ভূমিকা পালন করে চ্যানেল নাইন ও টেন। ক্রিকেট সম্প্রচারের ধরনেও অনেক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে এই চ্যানেল দুটি।
এবারের এসিসিতে এই দুটি চ্যানেলের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কাঠামো বদলে ফেলার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে প্রস্তাবিত লিগভিত্তিক ক্রিকেটের পক্ষেই সায় দেওয়া হয়েছে। চ্যানেল দুটি মনে করে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবাই সহজে বুঝতে পারে, এমন একটা লিগ কাঠামো চালু করা জরুরি। আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আইসিসির সভায় দ্বিস্তরের ক্রিকেটের বিষয়টি আলোচনা করা হবে, যে পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। আইসিসির সভার আগে অস্ট্রেলিয়ার এই ক্রিকেট সম্মেলনে উঠে এল বেশ কিছু দিকনির্দেশনা।
২০০-রও বেশি প্রতিনিধির এই সম্মেলনে ছিলেন আইসিসির ক্রিকেট মহাব্যবস্থাপক জিওফ অ্যালার্ডাইসও। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড এই সম্মেলনে বলেছেন, শুধু দ্বিস্তরের ক্রিকেট বলে দুটি স্তরের ওপর পুরো মনোযোগ রাখায় বিভ্রান্তি বাড়ছে। আসল বিষয়টি এর চেয়ে অনেক বড়। তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাটের সব কটি খেলা এমনভাবে হতে হবে, যেন সারা বিশ্বের ক্রিকেট–সমর্থক বোঝে, কেন কোন খেলাটি হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে বেশির ভাগ খেলাই লিগ–পদ্ধতিতে হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এমন একটা লিগ–পদ্ধতি চালুর কথা উঠে এসেছে এই আলোচনায়। সাদারল্যান্ড মনে করেন, এতে করে প্রতিটি ম্যাচেরই গুরুত্ব বাড়বে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লিগ–পদ্ধতি চালুর পক্ষে যাঁরা আছেন, তাঁরা বেশ কিছু সুবিধার কথা বলে আসছেন। এখনকার দ্বিপক্ষীয় সিরিজভিত্তিক ক্রিকেটে এমন অনেক সিরিজ বা ম্যাচ হয়, যেগুলোর সঙ্গে ওই দুটি দল ছাড়া বাকি ক্রিকেট বিশ্বের কোনো যোগসূত্র, সম্পর্ক থাকে না। ফলে, থাকে না কৌতূহল বা দেখার আগ্রহও। আবার প্রতিটি সিরিজে কখনো কখনো এমন কিছু ম্যাচ হয়, যেগুলোকে বলে ‘ডেড রাবার’। আগেই সিরিজ নির্ধারণ হয়ে গেলে এই ম্যাচ নিয়েও কৌতূহল কমে যায়, এমনকি সেই দুটি দেশের সমর্থকদের মধ্যেই।
লিগ–পদ্ধতি চালু হলে প্রতিটি ম্যাচেই সব কটি দেশের স্বার্থ জড়িয়ে থাকবে। যে কারণে একজন রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থক শুধু রিয়ালের ম্যাচই দেখেন না, রিয়ালের সম্ভাব্য শিরোপার প্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচগুলোরও খোঁজ রাখেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনই লিগ–পদ্ধতি চালু না হলে অচিরেই এর জনপ্রিয়তায় ধস নামবে বলেই আশঙ্কা সম্প্রচারকদের। লিগ–পদ্ধতি চালুর ক্ষেত্রে যেসব বোর্ড অনাগ্রহী, তাদের অনাগ্রহের জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনারও সুপারিশ উঠে এসেছে এই সম্মেলনে।
No comments:
Post a Comment